কৃষি ফার্মের সবজি গবেষণা মাঠটি এখন মাদক সেবীদের নিরাপদস্থল
স্টাফ রিপোর্টার // মাদক সেবনের নিরাপদস্থল এখন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সবজি গবেষণা মাঠ সংলগ্ন স্থানটি। মাদকপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা এবং পুলিশের ভয় না থাকায় এখানে দিনদিন সমাগম বাড়ছে মাদকসেবীদের। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এখানে আসা উঠতি বয়সী কিশোর ও যুবকরা অধিকাংশই বহিরাগত। মাদকের আড্ডা বসে কৃষি ফার্মের সবজি গবেষণা মাঠের পাশের ফাঁকা জায়গাটিতে। যেটা অশনি সংকেত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মাদকের দৌরাত্ম্যের কারণ হিসেবে প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে দায়ী করেছেন কেউ কেউ।
সচেতন মহল মনে করছেন, পূর্বে মাদকপ্রাপ্তি এত সহজলভ্য ছিলো না। মাদক কেনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। একটা ফোন কলেই সহজে মাদক মিলছে। কোন জটিলতা ছাড়াই বহিরাগতরা কৃষি ফার্মের ফাঁকা জায়গাটিকে বেছে নিয়েছে নেশাদ্রব্য গ্রহণের নিরাপদস্থল হিসেবে। শুধু তাই নয়। এখানে নিয়মিত ভাবে বসে জুয়ার আসর। গভীর রাত অব্দি চলে সেই আসর। বিকাল থেকে শুরু হয় মাদক সেবন। সন্ধ্যা নামলেই মাদকের সাথে যোগ হয় জুয়া। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হলো- স্কুলগামী ১৩/১৪ বছরের কিশোররা প্রকাশ্যে সিগারেট, গাঁজা সেবন করে এখানে। যুবকরা মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন রকমের মাদক সেবন করে থাকে।
দিন দিন মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সাথে আড্ডাও বাড়ছে। মাদকের টাকা জোগাতে তারা চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ফার্মে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। নারী, শিশু, কিশোরীদের এই মাদকের আসরের পাশ দিয়ে হেটে তাদের কোয়ার্টারে যেতে হয়। যাওয়ার সময় প্রতিনিয়ত চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। গাঁজা, সিগারেটের গন্ধে আশপাশের পরিবেশ বিকেল থেকে ভারী হয়ে থাকে।
স্থানীয় হালিম শেখ জানান, সিগারেটের দাম বেড়ে যাওয়া এবং গাঁজা সহজলভ্য হওয়ায় এরা গাঁজা বেছে নিয়েছে। আর সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা ইয়াবার দিকে ঝুঁকেছে। তবে এসব নিয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।
এক মাদক সেবী বলেন, গাঁজা এখন অনেক সহজলভ্য। এখন আমরা বাবা, ডাল, ঘুমের বড়ি, বিভিন্ন সিরাপ এবং দেশের বাহিরের নামি দামি ব্রান্ড খাই।
জনৈক এক কর্মচারী বলেন, এটা সামাজিক অবক্ষয়। সম্প্রতি গত কোরবানী ঈদে দুইজন মাদক সেবীকে পুলিশ আটক করেছিল। এরপর ২/৩দিন মাদকসেবীদের আনাগোনা বন্ধ থাকলেও তদারকি অব্যাহত না থাকায় পূর্বের অবস্থা আবার ফিরে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুল বলেন, ফার্মের নিজস্ব সিকিউরিটি অর্থাৎ আনছার বাহিনী রয়েছে। তারাও তো একটু সতর্ক হলে এসব মাদক সেবীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু তারা কঠোর না হওয়ার কারণ হলো- এসব মাদক সেবীদের মামা, খালু, ভাই, বাপ, চাচারা আনছারদের পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে এসব মাদকসেবীদের প্রশ্রয় দিয়ে তাদের উপকার নয় বরঞ্চ ক্ষতিই করছে।
এ প্রসঙ্গে ফার্মের আরেক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এটি তো সামাজিক সমস্যা। এখানে বন্ধ করলেও অন্য জায়গায় খাবে। এ নেশা থেকে দূর করবো কেমনে! তবে বাইরে যেখানে খাক সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়, আমাদের এখানে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে সচেষ্ট হতে হবে। বহিরাগত এসব টিনএজাররা যেকেউ যেন ফার্মে সহজে ঢুকতে না পারে সেই বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সচেতনমহলের কথা, এভাবে চলতে থাকলে এবং কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই মাদকের আসর বসবে পুরোপুরি প্রকাশ্যে।